Top Doctor List In Bangladesh.

কীভাবে জলবসন্ত বা চিকেন পক্স নিবারণ করা যায়?

জলবসন্ত বা চিকেন পক্স অত্যন্ত সংক্রামক রোগ, যা ভেরিসেলা জোস্টার ভাইরাস দ্বারা হয়। গরম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্বস্তিকর পরিবেশের বা শুষ্ক আবহাওয়ায় ভাইরাসটির আক্রমণ একটু বেশি দেখা দিয়ে থাকে। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ—সবাই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার একটু বেশি, বিশেষ করে ১০ বছরের কম বয়সীদের বেলায়।

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক আল-আমিন মৃধা বলেন, জলবসন্ত ছোট-বড় সবাইকে আক্রমণ করে। এটি খুবই ছোঁয়াচে একটি রোগ। এ রোগে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় এই অস্বস্তিকর অবস্থা থাকে। প্রথমে সামান্য জ্বর হতে পারে, এরপর ফোসকা পড়ে, চুলকানি হয়। অবশেষে ফোসকা থেকে শুকনা মরা চামড়া উঠে আসে। এ রোগের লক্ষণ হলো গায়ে প্রচণ্ড জ্বর হয়, হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোসকার মতো দেখা দেয়। এই রোগ সাধারণত একটু সচেতন থাকলে কয়েক দিনেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু ত্বকের দাগ থেকে যেতে পারে দীর্ঘদিন। শিশুর শরীরে দ্রুত জটিলতা দেখা দেয় বিধায় প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কীভাবে ছড়ায়?

দ্রুত বাতাসের মাধ্যমেই একে অন্যকে আক্রমণ করে। তা ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, কাপড়চোপড় বা আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে জলবসন্তের ফলে সৃষ্ট ফোসকা ফেটে গিয়ে যে পদার্থ নির্গত হয়, তা অন্যের সংস্পর্শে এলে এই রোগ সংক্রমিত হতে পারে—ভাইরাসটি ছড়াতে থাকে যত দিন না সব কটি গুটি শুকিয়ে যায়।

* কীভাবে বুঝবেন জলবসন্ত?

শুরুর দিকে শরীর ম্যাজম্যাজ করা, মাথাব্যথা করা, গা-হাত-পা ব্যথা করা, এমনকি পিঠেও ব্যথা হতে পারে। একটু সর্দি-কাশিও হতে পারে। এরপর জ্বর জ্বর ভাব হবে। এগুলো রোগের পূর্বলক্ষণ। এরপর শরীরে ঘামাচির মতো কিছু উঠতে দেখা যায়। তারপর সেটা একটু পর বড় হতে থাকে এবং ভেতরে পানি জমতে থাকে। খুব দ্রুতই শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। জলবসন্ত হয়ে গেলে রোগীর অনেক জ্বর আসবে। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হবে আর সঙ্গে সর্দি-কাশিও থাকবে।

* শিশুর জলবসন্ত হলে করণীয় কী?

সাধারণত জলবসন্তে আক্রান্ত শিশুর কোনো বিশেষ ওষুধের প্রয়োজন হয় না। এটি প্রতিরোধে ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। শিশুকে ভ্যাকসিন দিয়ে রাখুন।

* অভিভাবকের করণীয়

জলবসন্ত হলে শিশুদের খাওয়ার রুচি কমে যায়। তাই এ সময় শিশুদের খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। এ রোগ হওয়ার পাঁচ-ছয় দিন পর নিমপাতা, হলুদ একসঙ্গে সব শরীরে মেখে পাঁচ-ছয় দিন গোসল করিয়ে দিন। ছোঁয়াচে রোগ বলে পোশাক, কাঁথাসহ শিশুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা রাখার চেষ্টা করুন।

* প্রতিরোধের উপায় কী?

যতটুকু পারা যায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখতে হবে। বসন্ত প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। কারও একবার জলবসন্ত হয়ে গেলে আর টিকার প্রয়োজন নেই।

* রোগীকে কী খাওয়াবেন?

দিনে কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করাবেন। এ সময়ে রোগীকে অনেক পুষ্টিকর খাবার দেওয়া প্রয়োজন হয়। তবে খাবারের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, সবজি—সবকিছুই খাওয়া যাবে।

* কীভাবে গোসল করবেন?

জলবসন্ত হওয়ার পরও নিয়মিত গোসল করা যায়। এতে কোনো সমস্যা হয় না। তবে গোসল শেষে শরীর ঘষে মোছা যাবে না, আলতো করে মুছে নিতে হবে। স্বাভাবিক পানি দিয়ে গোসল করানো যাবে। রোগীর ব্যবহৃত পোশাক, বিছানার চাদর, শোবার ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেহেতু এ রোগে শরীরে দাগ হয়, তাই এ সময়ে ডাবের পানি খুব উপকারী এবং ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়া ও গোসল করলেও উপকার পাওয়া যাবে। রোগীকে একগাদা কাপড়চোপড়ে না জড়িয়ে তাকে হালকা সুতির কাপড় কিংবা পায়জামা পরান৷ রোগীর ত্বক ঠান্ডা থাকলে কম অস্বস্তি বোধ করবে৷

* জটিলতা

নানা ধরনের জটিলতা হতে পারে। ত্বকের সংক্রমণ, স্কারলেট জ্বর, নিউমোনিয়া, হাড়ের সংক্রমণ, মস্তিষ্ক ও কিডনির প্রদাহ, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি রোগ হতে পারে। গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে বিশেষ জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। মায়ের গর্ভের সন্তানের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে অথবা সন্তান বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম গ্রহণ করতে পারে।

* চিকিৎসা কী?

এই রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা হলো, ফুসকুড়ি না শুকানো পর্যন্ত রোগীকে আলাদা করে রাখা এবং উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে যদি রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে, তাহলে ভাইরাসজনিত রোগের কোনো চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না।

* কীভাবে চুলকানি নিবারণ করা যায়?

চেষ্টা করতে হবে না চুলকানোর। কারণ, চুলকানোর ফলে সংক্রমণ হতে পারে এবং ত্বকে স্থায়ী দাগ পড়ে যেতে পারে৷ তবে প্রবল চুলকানিকে সব সময় পুরোপুরি উপেক্ষা করা যায় না। সে ক্ষেত্রে আলতোভাবে চুলকানো যেতে পারে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে চুলকানির ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তাজা নিমপাতা হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে গোসল করালে বেশ ভালো উপকার হয়।

Popular Posts

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *